ছোটবেলা থেকে আসি, যখন ক্লাস ফোরে পড়ি তখন আম্মু আমাকে একটা নোট করে দেন (রচনা, বর্ষা বিষয়ক) । তাতে রবি কবির কবিতার উপস্থিতি থাকবে না তাই কী হয় ??
শ্রাবণের ধারা ঝরে ঝরঝর
আউশের ক্ষেত, জলে ভরভর
কালিমাখা মেঘ, ওপারে আকাশ
ঘনিয়াছে দেখ চাহিরে ।
আমার বেশ ভালো লেগেছিল, যদিও কিছুই বুঝিনি । আর মুখস্ত করে ফেললাম ।
ছোটবেলায় আমরা আরিচায় থাকতাম । বছর তিনেকের মত ছিলাম । পদ্মা নদীর বেশ কাছাকাছি একটা সরকারি কলোনীতে । বৃষ্টি আসলে কলোনীর মাঠগুলো জলে ভরে থাকত । কিযে সুন্দর দৃশ্য! আমার আজো মনে পড়ে । থই থই জল, ব্যাঙের ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ সব মিলে অসাধারণ একটা পরিবেশ ।
বরষা ধারা ঝরে অবিরল,
মাঠ জুড়ে যে জল টলমল ।
খুশিতে আজ ব্যাকুল হিয়া
তাধিন তাধিন নাচে প্রিয়া ।
আমার স্মৃতিতে আজো অমলিন সেই দিনগুলোর কথা । এরপরে ঢাকায় এলাম । মাঝে কিছু বছর আমাকে হতে হল যান্ত্রিক । বৃষ্টি উপভোগের ব্যাপারটা ভুলেই গেলাম । বুয়েটে ভর্তির পর বিশ্বকাপের গ্যাড়াকলে ছ মাসের এক লম্বা ছুটি । ছুটিটা আবার ভরা বর্ষায় । মজার ব্যাপার ওই সময়ে আমি কবি হয়ে গেলাম । সবকিছু নতুন করে উপলব্ধিতে এল । লিখতে লাগলাম দুহাত ভরে । আমার একজন অন্যতম প্রিয় বন্ধুর সাথে এই বর্ষাতেই পরিচয় হয়েছিল । সে ভুলে গেলেও আমার আজো মনে ভাসে সেই বর্ষার দিন । আমার সেদিনের বর্ষারোহিতের জন্যে শ্রদ্ধার্ঘ্য-
আজি বাদলের দিনে-
দাড়াও যদি নিভৃত বাতায়নে;
খুঁজে পাবে মোরে,
তব প্রতি স্পন্দনে, ঐ বাহুডোরে।
ঝরে যাওয়া জলের ধারায়!
আমি মূলত প্রেমের এবং মানবিক বা নাগরিক কবি । আমার লেখায় প্রকৃতি খুব বেশি কখনোই মূল হয়ে ধরা দেয়নি । সেই দিক থেকে বৃষ্টি ব্যতিক্রম । বৃস্টি নিয়ে আমি অনেক লিখেছি । মাঝখানে আমি বৃষ্টি এলেই নস্টলজিয়ায় ডুবে যেতাম । তখন বর্ষা নিয়ে অনেকগুলো কবিতা লিখেছিলাম । কিন্তু এখন ব্যাস্ততা আমায় গ্রাস করেছে । লেখাই বন্ধ হবার জোগাড় । তাই ইদানীং বর্ষা নিয়ে লেখা হয় না । তবে আশা করি আমি আবার কলম তুলতে পারব । আগামীতেও লিখব বৃষ্টি নিয়ে । আজো একটি বৃষ্টি কাব্য থাকবে শেষে ।
এইবার আমার বৃষ্টি বিষয়ক কিছু পছন্দের গানের কথা বলি। ফিরোজা বেগমের কন্ঠে "এমনি বরষা ছিল সেদিন" চমৎকার একটা গান।
মান্না দে উপমহাদেশের কিংবদন্তি শিল্পী । উনি নজরুল সঙ্গীত খুব বেশি না করলেও এই গানটি চমৎকার গেয়েছেন - শাওনো রাতে যদি
বর্ষার রূপ সবচেয়ে সুন্দর ফুটে উঠেছে রবিবাবুর গানে । অসংখ্য গান । কোনটা রেখে কোনটা বলি ??
১) মন মোর মেঘের সঙ্গী- হেমন্ত মুখার্জী
২) এসো নীপ বনে- রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা । (সবার জন্যে একটা তথ্য - নীপ মানে কদম)
৩) ঝরঝরো মুখোরো বাদল দিনে
এ প্রজন্মের শিল্পীরাও বেশ ভালো কিছু বর্ষার গান উপহার দিয়েছেন । এর মধ্যে কণা এবং হাবিবের গুলো আমার বেশ লাগে
১) বাদলা দিনে -কণা
২) বরষা -কণা
৩) একটু দাড়াবে কী ?? -হাবিব
আরো অনেক অনেক পছন্দের গান রয়েছে । সঙ্গে কবিতাও । এবারে আমার লেখা একটা বর্ষার কবিতা । আশা করি আপনাদের ভাল লাগবে ।
অনন্ত বরষা ধারা
তোমার গোপনো প্রেম,
মর্ত্যের মৃত্তিকায়-
রয়েছে লুকানো
অনাদিক্যাল ব্যাপী !
যখনি অসীম গগন ছেয়ে যায়
মৌসুমী বায়ুর চঞ্চলতায়,
তুমি তখন
খেল মিলনের খেলা;
চকিতে প্রিয়র হাতে
রাখো হাত, চুম্বন স্পর্শে ভরাও তারে ।
হে বরষা,
নিয়ত ঝরে তব অনন্ত ধারা ।
আষাঢ় কিংবা শ্রাবণ,
পূর্ণ হয় পরশে তোমার ।
নব পল্লবে ছায়
তরুলতা যত পৃথিবীর ।
গোঁছা ভরা কদমে ফুটে ওঠে-
খুশির আল্পনা, বলে সে মুগ্ধতায়
এসেছে বর্ষা;
এসেছে প্রাণদায়ী নব বারিধারা ।
হে অবিরাম জলধারা,
তোমার পূজারী আমি ।
খুলে দেই আনমনে তখন
জানলার কপাট ।
দখিনা বাতাসে তখন মেশে-
বৃষ্টির ছাট,
ছুয়ে যায় হাতখানি মোর ।
বুকে জাগে অচেনা উচ্ছাস
ভিজে যায় মন,
জেগে ওঠে হৃদয় সাগর !
কবিতা হয়ে
ঝরে পড়ে মনের আবেগচ্ছটা ।
হে বৃস্টি,
হে অনাগত বরষাধারা-
ঝরিয়ে যাও অমিয়বারি
নিয়ত সর্বাঙ্গ মোর,
সিক্ত হোক ছোয়ায় তোমার ।
আশা করি আপনাদের ভাল লাগলো বর্ষা বিলাস । আসুন প্রার্থনা করি বর্ষার নবধারা জল, আমাদের সমস্ত বেদনা ধুঁয়ে নিয়ে যাক । জীবন পূর্ণ হোক আনন্দে । সবাই ভালো থাকুন । থেমে থেমে নাগরিক ব্যাস্ততার মাঝে চলবে মেঘমেদুর বরষায় অবগাহন, আরো একটু বর্ষা বিলাস ।
২য় পর্বের লিঙ্ক- বরষা ভেজা স্মৃতির দুয়ার - পর্ব ২ (কবিতা এবং গানে বৃষ্টি স্মরণ)